দার্জিলিং হিমালয়ান এক্সপ্রেসঃ হিমালয়ের বুকে এক খেলনা ট্রেন

 দার্জিলিং হিমালয়ান এক্সপ্রেসঃ হিমালয়ের বুকে এক খেলনা ট্রেন

দার্জিলিং হিমালয়ান রেল পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং শহরের মধ্যে চলাচলকারী একটি ২ ফুট ন্যারোগেজ রেল পরিষেবা। এই রেল টয় ট্রেন নামে সমধিক পরিচিত। দার্জিলিং হিমালয়ান রেল ভারতীয় রেল কর্তৃক পরিচালিত। ১৮৭৯ থেকে ১৮৮১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে নির্মিত এই রেলপথের দৈর্ঘ্য ৮৬ কিলোমিটার (৫৩ মাইল)। এর উচ্চতার মাত্রা শিলিগুড়িতে ১০০ মিটার (৩২৮ ফুট) এবং দার্জিলিং এ ২,২০০ মিটার (৭,২১৮ ফুট)। আজও এটি বাষ্পচালিত ইঞ্জিনে চলে। দার্জিলিঙের মেলট্রেনের জন্য ডিজেল চালিত ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো দার্জিলিং হিমালয়ান রেলকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভু ক্ত করে। ২০০৫ সালে নীলগিরি পার্বত্য রেলকেও সঙ্গে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভু ক্ত করা হয়। ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে দার্জিলিং শহরকে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী রূপে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়। স্কটিশ ধর্মপ্রচারকরা ব্রিটিশ অধিবাসীদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা শুরু করেন। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে দার্জিলিং হিমালয়ান রেল চালু হলে
শহরের উন্নয়ন আরো দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায়। সুকনা স্টেশন থেকে বুঝা যায় ক্রমান্বয়ে উচ্চতায় উঠছে ট্রেন। বড় রকমের বাঁক শুরু এ স্টেশন থেকে। রান্টং স্টেশন বা নিকটবর্তী এলাকা থেকে কার্শিয়াং পাহাড়ের অপূর্বসৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এ রুটে ৭৪০৭ ফুট উচ্চতায় ‘ঘুম’ স্টেশন অবস্থিত। যা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় এবং সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত রেলস্টেশন। অন্যদিকে এনজেপি মাত্র ৩১৪ ফুট উপরে (সমতল ভূমি থেকে) অবস্থিত। ১৮৮০-১৮৮১ সালের দিকে এ রুটের বেশিরভাগ স্টেশনগুলো প্রতিষ্ঠিত। এর মাঝে আছে কার্শিয়াং স্টেশন। যেখান থেকে চা বাগানের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়। ‘ঘুম’ স্টেশনের আগে ‘জোড় বাংলা’তে সড়কপথ ও রেলপথ ক্রস করেছে। এখানকার বাতাসিয়ার বাগান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও দার্জিলিংয়ের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। সর্বশেষ স্টেশন হচ্ছে দার্জিলিং। এটি ৬৮১২ ফুট উচ্চতায়। ১৯৩৪ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত দার্জিলিং স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় যা ১৯৪৪ সালে পুনর্নির্মিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। এ রুটের আঁকাবাঁকা পথ, বিপজ্জনক বাঁক (যা কোন কোন ক্ষেত্রে প্রায় ৬৯ ডিগ্রী পর্যন্ত) রোমাঞ্চকে আরও বাড়িয়ে দেয়। টাং, সোনাদা, ইত্যাদি বেশ কয়েকটি ছোট ছোট স্টেশন বা বাজার এ রুটে অবস্থিত। ট্রেন রুটটি পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি
থেকে ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) রান করে দার্জিলিংয়ে পৌঁছে। এই রুটের মধ্যে শিলিগুড়ি, কার্শিয়াং ও ঘুম স্টেশন অবস্থিত। এইগুলির মধ্যে সবচেয়ে মনোরম দৃশ্যের মধ্যে রয়েছে ঘনঘড়ি এবং দার্জিলিংয়ের মধ্যে বাতাসিয়া লুপ, যা পাহাড়ের উপরদার্জিলিং এবং পটভূমিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড়ে প্যানোরামিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। ট্রেনটি পাঁচটি প্রধান, এবং প্রায় ৫০০ ছোট,
ব্রিজ অতিক্রম করে। এখান থেকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্য ও তাদের জীবনধারা লক্ষ্য করা যায়।
খেয়াল করলাম দার্জিলিং স্টেশনের পাশের চত্বরটা কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। সেখানে বড় একটা পুরনো ট্রেন বসে ছিলো।
পুরনো ইঞ্জিন। ওই চত্বরের গেইটে একটি সাইনবোর্ড- দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে- ঘুম প্ল্যাটফর্মের ঠিক উল্টোদিকেই
মিউজিয়াম। ওই চত্বরের প্রবেশ মুখে আরেকটা সাইনবোর্ড- ঘুম মিউজিয়াম। অবশ্যই রেলওয়ে মিউজিয়াম। ভেতরে কি আছে? পুরনো ইঞ্জিন, পাত বা লাইনের ধাতব অংশ, ইতিহাস, দলিল দস্তাবেজ, ছবি ইত্যাদি। নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশন থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত টয় ট্রেনে ভ্রমণ করলে খুব মজা করে কাটানো যায়। এমনই করে হিমালয়ান রেলওয়ে তার ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যধরে রেখে চলবে এমনটাই প্রত্যাশা দার্জিলিংয়ের অধিবাসী এবং বেড়াতে আসা পর্যটকদের।

লেখক পরিচিতিঃ

রাইসুল রাজন
ইনকাম ট্যাক্স, ভ্যাট, কোম্পানী আইন কনসালট্যান্ট
এ টি এম রফিকু ল ইসলাম এন্ড এসোসিয়েট।

BRFG BRFG

Related post

Leave a Reply