রেলওয়ে আইন

 রেলওয়ে আইন

আপনি যদি টিকেট করে ট্রেন ভ্রমণ করেন তবে আপনার কোন চিন্তা নেই। আর যদি টিকেট ছাড়া ট্রেনে ওঠেন তবে সব সময় নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হবে। একটা শংকা কাজ করবে-এই বুঝি আমাকে ধরে ফেললো। ধরলে কী বলবো, কয় টাকা নেবে একটা তটস্থ ভাব কাজ করে। মনে রাখুন, আপনি যদি টিকেট ছাড়া ট্রেনে উঠেই যান তবে টিটিই/টিসি এর অপেক্ষায় থাকুন বা তাঁকে খুঁজে বের করুন। তাঁকে আপনার গন্তব্য স্টেশনের কথা বলুন। উনি রেলওয়ে আইন-১৮৯০ অনুযায়ী আপনাকে ইএফটি টিকেট দেবে। দয়া করে ইএফটি টিকেট না নিয়ে কাউকে টাকা দেবেন না। ইএফটি টিকেট নিতে হয়তো কিছুটাকা বেশি লাগবে কিন্তু আপনি বৈধ যাত্রী হয়ে যাবেন। সিস্টেম করে কোন এ্যাটেন্ডেন্ট এর হাতে কয়েক টাকা ধরিয়ে দিলে আপনি কিন্তু অবৈধ যাত্রী হিসেবেই গণ্য হবেন। স্টেশনে নামার পর গেট পেরুতে গেলে টিসি’র কাছে কিন্তু আবার ধরা খাবেন। তখন জরিমানা সহ দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হবে। মোটকথা, নিজের কাছে, নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকু ন। দেখবেন মন থেকে কত ভালো লাগে।

ইএফটি (EFT=Excess Fare Ticket)

ট্রেনে টিকেট ছাড়া ভ্রমণের সময় টিটিই জরিমানাসহ যে টিকেট করে দিয়ে থাকেন সেটাই ইএফটি টিকেট । রেলের নিয়ম অনুযায়ী ইএফটি টিকিট দেয়া হয়ে থাকে। ইএফটি টিকেট নিয়ে টিটিইদের সাথে যাত্রীদের তু মুল বচসা লেগে থাকে। অনেকে তাই অল্প কিছুটাকা দিয়ে ম্যানেজ করতে চেষ্টা করে নিজের ঈমান ও আমল নষ্ট করে ফেলে। কোন কোন যাত্রী আবার এক কাঠি সরেষ। তারা টিটিইদের হুমকি দেয়, দেখে নেবার কথা বলে শাষায়। ইএফটি টিকেট সম্বন্ধে রেলের নিয়ম জানা থাকলে এমনটি হবার কথা নয়। চলুন সেগুলো জানতে চেষ্টা করি। চলাচলরত ট্রেনে সাধারণত ৪ টি কারণে জরিমানাসহ ভাড়া(ইএফটি টিকেট) আদায় করা হয়ে থাকে।

ক) টিকেট বিহীন যাত্রীঃ

কর্তব্যরত একজন টিটিই এর জন্য এটা হলো ভ্রমনরত যাত্রীর নিকট হতে ভাড়া আদায়ের সবচেয়ে প্রধান কারণ। টিটিই করে কী, টিকেট বিহীন উক্ত যাত্রীকে যাত্রা শুরুর স্টেশন থেকে ভাড়ার সঙ্গে আক্কেল সেলামী স্বরুপ জরিমানা আদায় করেন। এমন ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ স্থির হয় যাত্রা শুরুর স্টেশন এবং বর্ণিত যাত্রীকে কোথায় শনাক্ত করা গেছে তার উপর ভিত্তি করে। উদাহরণস্বরুপ- একজন বিনা টিকেটের যাত্রী যদি ঢাকা থেকে যে কোনো ট্রেনের শোভন চেয়ারে উঠে নাটোর যায় এবং তাকে যদি টাঙ্গাইল স্টেশনে শনাক্ত করা হয়, তবে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের ভাড়া তার জন্য জরিমানা হিসেবে গণ্য হবে। ঢাকা থেকে নাটোরের ভাড়া ৩২০ এবং ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের ভাড়া ১১৫ টাকা। তাহলে উক্ত টিকেট বিহীন যাত্রীর ইএফটি ভাড়া হবে সাকুল্যে (৩২০+১১৫) অর্থাৎ ৪৩৫ টাকা। যা বোঝা গেল তাতে, ইএফটি তে কোনো টিকিট বিহীন যাত্রীর ভাড়া একজন টিটিই আদায় করতে চাইলে যাত্রা শুরুর স্টেশন থেকে গন্তব্য স্টেশনের ভাড়া এবং যাত্রী যে স্টেশনে শনাক্ত হয়েছে সে স্টেশন পর্যন্ত জরিমানা আদায় করে রশিদ দিতে পারে।

খ) অভিভাবকের সাথে অতিরিক্ত যাত্রীর ইএফটিতে ভাড়াঃ

ধরা যাক, একই পরিবারের ৩ জন যাত্রী এক সাথে ভ্রমন করছে কিন্তু ২ জনের টিকেট আছে আর ১ জনের টিকেট নেই। এমন ক্ষেত্রে টিকেট বিহীন তৃতীয় ব্যক্তির ভাড়া ও জরিমানা আদায় করার নিয়ম হলো- যে স্টেশন থেকে তারা যাত্রা শুরু করেছে অর্থাৎ যে স্টেশনের টিকেট বাকি ২ জনের কাছে আছে, সেই স্টেশন থেকে গন্তব্য স্টেশনের ভাড়া এবং যে স্টেশনে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে সেই ভাড়া তাকে জরিমানা হিসেবে দিতে হবে। অর্থাৎ ইএফটি ভাড়া হবে ক অনুচ্ছেদে বর্ণিত উদাহরণ এর মতো।

গ) টিকেটে বর্ণিত স্থানের অতিরিক্ত ভ্রমণঃ

কোন যাত্রী যদি টিকেটে উল্লেখিত স্থানের বেশি দূরত্ব ভ্রমন করে তবে তার নিকট হতে জরিমানা আদায় করা হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় যে দূরত্ব পর্যন্ত সে টিকেট করেছে তার পর থেকে সে ব্যক্তির গন্তব্য এবং তাকে যেখানে শনাক্ত করা গেছে সেটা বিবেচনা করে তাকে জরিমানা করা হয়ে থাকে। উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ধরুন আপনার টিকেট ঢাকা থেকে সেতু পূর্ব কিন্তু আপনি নাটোর যেতে ইচ্ছুক । সেতু অতিক্রমের সময় আপনি টিটিই এর কাছে ধরা খেলেন। গাঁইগুঁই করতে করতে বললেন যে আপনি নাটোর যেতে চান কিন্তু টিকেট পেয়েছেন সেতু পূর্ব অব্দি। আপনাকে কিন্তু জরিমানা দিতেই হবে। এমন ক্ষেত্রে যা হবে তা হলো- আপনার ভাড়া হবে ঢাকা থেকে নাটোর এর ভাড়া ৩২০ + সেতু পূর্ব হতে নাটোর এর ভাড়া(ধরুন ২৫০ টাকা)। তাহলে ইএফটিতে আপনার ভাড়া আসবে (৩২০+২৫০) = ৫৭০ টাকা।

ঘ) অভিভাবকের সাথে অতিরিক্তি অপ্রাপ্ত বয়স্ক যাত্রী:

আমরা হরহামেশাই আমাদের সাথে যাত্রা করা অপ্রাপ্ত বয়স্ক(৩-১২ বছর বয়সী) ছোট ছেলে/মেয়ে, ভাই/বোন এর জন্য কোন টিকেট করি না। এটা রেলওয়ে আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জরিমানা দেবার মতো বিষয়। রেলওয়েতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক(৩-১২ বছর)দের জন্য সিটসহ টিকেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কেউ যদি তা না করে এবং টিটিই যদি মনে করেন জরিমানা করবেন তাহলে তা রোধ করার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে প্রতি অপ্রাপ্ত বয়স্ক যাত্রীর জন্য মূল ভাড়ার ৬৬ শতাংশ টাকা + তাকে যে স্টেশনে শনাক্ত হয়েছে সেখান থেকে গন্তব্য স্টেশনের ভাড়া জরিমানা হিসেবে দিতে হবে।

উল্লেখ্য যে, শুধু গার্ড স (ট্রেন পরিচালক) সার্টিফিকেট(GC) নিয়ে যদি কেউ ট্রেনে ভ্রমণ করে তবে তাকে কোন প্রকার জরিমানাদিতে হয় না। এছাড়া সকল ক্ষেত্রে একজন বিনা টিকেটের যাত্রী জরিমানাসহ ভাড়া দিতে বাধ্য। যদিও বর্তমানে গার্ডস সার্টিফিকেটএর ব্যবহার নেই বললেই চলে।

পাদটীকায় আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো- যাত্রীবাহী ট্রেনে দায়ি ত্বরত একজন টিটিই বিনা কৈফিয়তে ভাড়ার সমপরিমাণ টাকাজরিমানা করতে পারেন বা ভাড়া ও অতিরিক্তি ৫০ টাকা নিয়েও ইএফটি টিকেট প্রদান করতে পারেন।

লেখক পরিচিতিঃ

শাহাবুদ্দিন আহমেদ
প্রশাসনিক কর্মকর্তা
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড
ডেসকো।

BRFG BRFG

Related post

Leave a Reply