আন্ত:দেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস
ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি-ঢাকা রুটে চলাচলকারী আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস। অক্টোবর মাসে ট্রেনটি সর্বোচ্চসংখ্যক যাত্রী নিয়ে যাত্রা করছে। স্থলবন্দরের ঝামেলা এড়িয়ে এই ট্রেনে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি ভ্রমনের সুযোগ নিতে পারেন আপনিও। তবে অনেকেই কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন দরকারী তথ্যগুলো না জানা থাকার কারনে। ট্রেন, স্টেশন ও ইমিগ্রেশনে আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু সাধারন তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করছি—
মিতালী ট্রেনে যাত্রার জন্য পাসপোর্টে ভারত প্রবেশ ও বাহিরের পোর্ট দেখাতে হবে By Rail New Jalpaiguri। তবে যাদের এই পোর্ট দেখানো নাই তারা ৩০০ টাকার বিনিময়ে পোর্ট এনডোর্স করাতে পারবেন ivac থেকে। এর জন্য
[http://www.ivacbd.com/Other-Forms](http://www.ivacbd.com/Other-Forms?fbclid=IwAR2BodN9JngsK92p2pw-kAH09W7BtnxmnVTMWMlo21yC9LdpAxTuf31UDVU) এই লিংক থেকে [ENDORSEMENT OF PORT APPLICATION FORM](http://ivacbd.com/uploads/banner/afzR8endorsement%20of%20port%20application%20form.pdf?fbclid=IwAR1zr97pOLsyt7OlQ8-BwXo7BzuaWqCxTPY4UKDnvOk1MdJw6UpaLJlJi4c) নামিয়ে পূরন করে পাসপোর্ট সহ চলে যান ivac সেন্টারে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন– [https://www.ivacbd.com/Additional-route-endorsement-service?ln=&ln=bn](https://www.ivacbd.com/Additional-route-endorsement-service?ln=bn&fbclid=IwAR0RuprljhRP18Ib7CDAcfRfLmblA5HhOVAMWUdD45shqOjHpiYzyvhqarE)
ট্রেন ছাড়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে সপ্তাহে দুই দিন- সোম ও বৃহষ্পতিবার। রাত ৯:৫০ সময়ে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ফেরার ট্রেন সপ্তাহে দুই দিন- রবি ও বুধবার। বেলা ১১:৪৫ সময়ে।
টিকেট পাওয়া যাবে চট্টগ্রাম ও কমলাপুরের মৈত্রী এক্সপ্রেসের টিকেট কাউন্টার থেকে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত, প্রতিদিন। ভিসা পাওয়ার পর পাসপোর্টের মূলকপি নিয়ে যেতে হবে টিকেট কাটতে, কোনো ফটোকপি চলবে না। একজন সর্বোচ্চ ৪ জনের পাসপোর্ট নিয়ে গিয়ে টিকেট কাটতে পারবেন। পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে কমপক্ষে ৬ মাস, এবং ভিসায় By Rail New Jalpaiguri উল্লেখ থাকতে হবে। আর কোনো ডকুমেন্ট লাগবে না। আপনি ফেরার টিকেটও কাটতে পারবেন এখান থেকে- ১০% টিকেট সংরক্ষিত থাকে বাংলাদেশের কাউন্টারের জন্য। যারা যাওয়া ও আসা মিতালীতেই সারতে চান, তারা কাউন্টারে সেভাবেই কথা বলে নিবেন।
নতুন ভাড়াঃ এসি চেয়ারকোচে ২৯৫৫ টাকা। কেবিনে যাওয়ার সময় এক সিট ৫৬১০ এবং ফেরার পথে এক সিট ৩৬৮৫ টাকা। ভাড়ার সাথে ট্রাভেল ট্যাক্স (৫০০ টাকা) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আর ৫ বছর বয়স পর্যন্ত অপ্রাপ্ত টিকেটের ক্ষেত্রে ভাড়া ৫০% প্রযোজ্য হবে।
বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশনের জন্য টিকা সনদ (কমপক্ষে ২ ডোজ টিকার), এনওসি ছাড়পত্রের কপি, পাসপোর্ট আর টিকেট নিয়ে ট্রেন ছাড়ার ২ ঘন্টা আগে স্টেশনে প্রবেশ করতে হবে।
স্টেশনে প্রবেশের পর বাংলাদেশী যাত্রীদের জন্য Departure Card (বহির্গমন পত্র) ফরম ফিলাপ করতে হবে, সাথে কলম নিয়ে যাবেন। খাবার-দাবার সাথে নিয়ে ট্রেনে আরোহন করতে পারবেন, কোনো সমস্যা নেই। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌছানোর সঠিক ভারতীয় সময় ৭:১৫ সময় হলেও সাধারনত ট্রেনটি কমপক্ষে ২ ঘন্টা লেট করে থাকে।
ট্রেন থেকে নেমে ভারতীয় অংশের ইমিগ্রেশনের জন্য আপনাকে প্ল্যাটফরমে নির্ধারিত লাইনে দাড়াতে হবে। সেখানে বাংলাদেশী যাত্রীদের জন্য Arrival Card দেয়া হবে, যা ফিলাপ করার পর আপনি ইমিগ্রেশন বুথের দিকে এগিয়ে যাবেন। সাথে আগের মতোই টিকা সনদ, টিকেট, এনওসি ও পাসপোর্ট হাতে রাখবেন। পাসপোর্টে সিল ও লাগেজ স্ক্যানিং-এর পর আপনি বের হবেন ১ নম্বর প্ল্যাটফরমে। সেখান থেকে মূল বিল্ডিং এর ট্যাক্সি স্ট্যান্ড যেতে আপনাকে ফুট ওভারব্রিজ নিতে হবে।
ফ্রেশ হয়ে নেয়ার জন্য ১ নম্বর প্ল্যাটফরমে রয়েছে এসি ওয়েটিং রুম, চার্জ ঘন্টাপ্রতি ১০ টাকা। এছাড়া সেখানেই রয়েছে রিটায়ারিং রুম, যেটা হোটেল রুমের মতোই ১২-২৪ ঘন্টার জন্য বুকিং নিয়ে থাকতে পারবেন। ফুট ওভারপাস দিয়ে স্টেশনের মূল বিল্ডিং এ চলে আসার পর মানি এক্সচেঞ্জ পাবেন মিতালীর টিকেট কাউন্টারের পাশে। স্টেশন ভবনের নিচে রয়েছে SBI ব্যাংকের এটিএম বুথ। এছাড়া খাবারের জন্য পাশেই পাওয়া যাবে ভারতীয় রেলওয়ের নতুন Coach Restaurant- “Carry Express”। আর ট্যুর এজেন্ট ও ভারতীয় সিম সংগ্রহের জন্য স্টেশনের বাইরে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের পিছনে রয়েছে বিভিন্ন দোকান। দুঃখজনক বিষয় হলো, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে এই ধরনের কোনো সুবিধাই পাওয়া যায় না।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ট্যাক্সিতে শিলিগুড়ি যেতে সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট, এবং দার্জিলিং ৩ ঘন্টা। মিতালীতে ফেরার জন্য সকাল ৯:৩০ সময়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে উপস্থিত থাকতে হবে। মিতালীর যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্ল্যাটফরম নাম্বার 1A, যেটা ১ নম্বর প্ল্যাটফরমের সাথেই অবস্থিত।
ক্রসিং এবং নিরাপত্তা জনিত চেকিং এর কারনে ট্রেন বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়তে পারে। এমতাবস্থায় ট্রেনের দরজা খোলা বা ট্রেন থেকে নামার চেষ্টা করা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। ভ্রমনকালীন সময়ে যেকোন প্রয়োজনে আপনার কোচের কর্তব্যরত এটেন্ডেন্ট অথবা ট্রেন গার্ডের সহায়তা নিন।
মিতালী এক্সপ্রেসে ভারতীয় রেলওয়ের কোচ এখন চলাচল করছে প্রতি ট্রিপে। এই কোচগুলো আরামদায়ক ও ফ্রেশ কন্ডিশনে রয়েছে। সার্ভিস যথেষ্ট ভালো- Highly Recommended।