ম্যাগলেভ ট্রেন
- List of Train
- March 7, 2022
- 0
- 560
- 1 minute read
চীনা কর্তৃপক্ষের সৌজন্যে গত ২৭ জুলাই ২০১৬ ম্যাগলেভ ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ পেলাম। অসাধারণ অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর দুটোদেশ জার্মানি ও জাপান ম্যাগলেভ ট্রেনের পথিকৃ ৎ হলেও তারা এখনো বাণিজ্যিক চলাচল শুরুকরেনি। তাদের ক্ষেত্র এখনোটেস্ট ড্রাইভে সীমাবদ্ধ। চীন জার্মানি থেকে ম্যাগলেভ প্রযুক্তি আমদানি করে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক চলাচলে সীমাবদ্ধ রাখেনি গবেষণার ক্ষেত্রেও অনেক অগ্রসর হচ্ছে। Tongji University, সাংহাই এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। সাংহাই এর লং ইয়াং রোড স্টেশন থেকে পুডং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ৩০ কিঃমিঃ ম্যাগলেভ লাইন পৃথিবীর একমাত্র বাণিজ্যিক রুট যেতে সময় নেয় ৮ মিনিট। আমার ভ্রমণকালীন সময়ে সর্বোচ্চ ৪৩১ কিঃমিঃ/ঘন্টা গতিতে চলতে দেখেছি।
সংক্ষেপে ম্যাগলেভ প্রযুক্তিঃ
সাধারণ ট্রেনের ন্যায় ম্যাগলেভ ট্রেনে চাকা থাকেনা। ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফোর্সের সহায়তায় লাইন থেকে সর্বোচ্চ ১০মিঃমিঃ উচ্চতায় উঠে দ্রুত গতিতে সামনে এগিয়ে চলে। ম্যাগলেভ ট্রেন কে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে গতিসম্পন্ন ট্রেন যা কিনা এখন বিশ্বে শুধু চীন আর জাপানে আছে । গতি সর্বোচ্চ প্রায় ৬০০ কিলোমিটার অর্থাৎ টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া যেতে মাত্র ১/১.৫ ঘন্টা হলেই হবে।
এই ট্রেনটা আসলে কিভাবে কাজ করে :
ম্যাগলেভ বা ম্যাগনেটিক লেভিটেশন হল চুম্বকের চুম্বকত্ত ধর্মকাজে লাগিয়ে ট্রেনকে ভাসিয়ে নিয়ে এক জায়গা থেকে আর জায়গায় নিয়ে যাওয়া । আমরা সবাই জানি পৃথিবীর সব বস্তুই মাধ্যকর্ষন শক্তি বা অভিকর্ষ বলের কারনে ভূমির সাথে লেগে থাকে। আবার এটাও জানি যে চুম্বকের দুটি ধর্ম – আকর্ষণ আর বির্কষণ ।তো এই চুম্বকের দুটি ধর্ম অর্থাৎ আকর্ষণ(Attraction) ও বির্কষণ(Repulsion) কে কাজে লাগিয়েই এই ট্রেনটিকে চালনা করা হয় ।
তো কেন এই ট্রেন এর এত স্পীড :
এর কারণ হল কোনো কিছুর এফিসিয়েন্সি বা কর্মদক্ষতা নষ্ট করার জন্য যে র্ঘষণ(Friction) লস আছে তা এই ট্রেনে একেবারেই নেই বললেই চলে । যদিও এই ফ্রিকশন এর অনেক সুবিধাও আছে, যার কারনেই আমরা হাঁটা চলাফেরা করতে পারি।
কিভাবে ট্রেনটি কাজ করে অর্থাৎ গতিশীল হয় :
ব্যাপার টা এমন যে, ট্রেনের ভেতরে কিছুতড়িৎচুম্বক দিয়ে উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু বা N & S Pole সৃষ্টি করা হয় এবং রেল ট্র্যাক টা এমন ভাবে ডিজাইন করা যেন সেখানে হাজার হাজার নর্থ আর সাউথ পোল সৃষ্টি করা আছে এবং অল্টারনেটিং কারেন্ট ফ্লো করার মাধ্যমে সেই নর্থ আর সাউথ পোল গুলো চলমান থাকে । এখন ডিজাইন টা এমন ভাবে করা যেন ট্রেনের নর্থপোল একদিকে সাউথ পোল কে আকর্ষণ করবে, অপরদিকে আরএক নর্থ পোল ট্রেনের ভেতরের নর্থপোল কে বিকর্ষণ করবে । অর্থাৎ একই পোল বা মেরু দুদিক থেকে চাপ অনুভব করছে, আকর্ষণ আর বিকর্ষণ । ঠিক একই রকম ঘটবে সাউথ পোল এর ক্ষেত্রে অর্থাৎ আকর্ষণ আর বিকর্ষণ । এই আকর্ষণ বা বিকর্ষণ কে বলা হয় ম্যাগনেটিক অ্যাট্রাকশন(চুম্বকীয় আকর্ষণ) ও ম্যাগনেটিক রিপালশন(চুম্বকীয় বিকর্ষণ) এবং ট্রেনগুলোর গতি নির্ভর করে কত দ্রুত এই পোল গুলো পরিবর্তন করা যায় তার ওপর ।
লেখক পরিচিতিঃ
রোকনুজ্জামান রোকন
উপ সচিব
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার